Skip to main content

কানাইলাল জানা

পুরো ভ্রমণ কথা পড়তে ভ্রমণকারীর নাম-এর ওপর ক্লিক করুন ।। হোম পেজ-এ যেত এখানে ক্লিক করুন

audio testing
ভ্রমণকারীর কণ্ঠে ভ্রমণ কথা 
এই দেখা

সিউড়ি থাকাকালীন বীরভূমের যে সব গ্রাম দেখেছি, তার মধ্যে আকর্ষণীয় নাম বক্রেশ্বরের পথে 'ধান্যকুড়িয়া। রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রাম, যার অনেকটাই এখন ময়ূরাক্ষীর রোষানলে।

কিন্তু এতদিন পর এই প্রথম দুর্গোৎসবের নবমী-তে গেলাম বহু প্রত্যাশিত উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ধান্যকুড়িয়া। বারাসাত দিয়ে নয়, গড়িয়া পাঁচপোতা হয়ে নতুন রাস্তা খুঁজে খুঁজে। ট্যানারি এলাকা পেরিয়ে মালঞ্চ এলাম, যেখানে বিদ্যাধরী বইছে যেন খোলা চুলের এক উন্মাদিনী। কার্তিক অঘ্রাণে ধানমাঠের অতিরিক্ত জল যখন 'যাওপাখি' বলে ছেড়ে দেওয়া হয়, নদী বেগবতীই হয়। দূর দূর গ্রাম থেকে বাংলার শারদ অর্ঘ্যের সুষমা ভেসে আসছে বাংলা গানের মাধ্যমে। গান নিয়ে কত পরীক্ষা নিরীক্ষা বহুদূর বিস্তৃত চর্চা হল, তবু আপামর বাঙালির মন মজে সেই সহজ সুন্দর কথা ও সুরে। বড় এক পানিফলের খেতে ব্যস্ততা ফসল তোলায়। তার পাড়েই বসে পড়ি দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে। ছবিও তুলল মধুমিতা, ময়ূরাক্ষী। প্রায় প্রত্যেকটি রাস্তা দুয়োরাণীর মতো শুয়ে আছে বুকে ব্যথা ও কষ্ট নিয়ে, সামান্য শুশ্রূষা ও যত্ন পেলে সে সুখী হয়ে পথচারীকেও সুখী করবে - এই আশায়।


এক এক জায়গায় ভেড়ি এত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে, মনে হবে ঢেউ হীন সমুদ্র এখানে দাঁড়িয়ে পড়েছে কপাল ঠুকে। সারাপথ রেশমি সুতোর মতন মায়াবী রোদ, পার্বতী বাউলের মতন খেয়ালি হাওয়া, রোশন ক্ষ্যাপার মতন উদাসী মেঘ 'আয় আয়' বলে কত গ্রাম ও জনপদ পেরিয়ে অবশেষে আমাদের ডেকে নিয়ে গেল বহু আকাংখিত সেই বর্ধিষ্ণু গ্রামে।

টাকি রোডের ধারে 'ধান্যকুড়িয়া'-র মতো পশ্চিম বঙ্গে অন্তত আর কোনো গ্রাম নেই, যেখানে একই পাড়ায় এতজন জমিদারের বাস । মিনার, নজরমিনার, নাটমন্দির, কোরিন্থিয়ান পিলার সহ এক একটি বাড়ির নির্মাণ সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেবে জোড়া সাঁকো ঠাকুর বাড়ি বা শোভাবাজার রাজবাড়ি কথা। অতীতে মূলত পাটের কারবারে যুক্ত থেকে এবং রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করে এঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি। কিন্তু করোনা আবহে সমাদ্দার বাড়ি ছাড়া সেন, বল্লভ, গায়েন, সাউ, মন্ডল ইত্যাদি উপাধিধারী জমিদার পরিবারে এবার দুর্গোৎসব নেই। নেই ভিড়। সেজন্যই তো খোদ কলকাতার পুজোকে পুরো অদেখা রেখে এখানে আসা।

গোটা এলাকা-কে মাধুর্যময় করে রেখেছে বড় বড় দিঘি বাগানবাড়ি রাসমঞ্চ। এখানকার জমিদার শ্যাম বল্লভের নামেই কিন্তু শ্যামবাজার। উপেন্দ্র সাউদের ১০৮ বিঘা বাগান বাড়ি তছনছ হলেও সেই আমলের নাচমহল পাহারায় আছেন বেড়াচাঁপার আসরফ আলি। এত গাম্ভীর্যপূর্ণ গায়েনদের বাড়ি, এখানেই সুটিং হয় উত্তম কুমার অভিনীত 'সাহেব বিবি গোলাম ' ও ঋতুপর্ণ ঘোষের 'ব্যোমকেশ'। আর জি কর হাসপাতালের কাছে এখনো বিদ্যমান বল্লভ ও সাউদের প্রাসাদোপম অট্টালিকা, যা দেখে আশ্চর্য হতে হয়।

চন্দ্রকেতুগড় দেখে বারাসাত দিয়ে বাইপাস হয়ে ফেরা। এই দীর্ঘ পথের দু'ধারে বসিরহাট কলেজ সহ অন্য আরো কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪৭। সহজে অনুমেয় ইংরেজ আমলের শেষ দিকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য কতটা উন্মুখ ছিল দেশবাসী!

এক দিনের এই 'দেশ দেখা' অনেকটা দীর্ঘ উপবাসের পর পোলাও খাওয়ার মতোই বেশ সুস্বাদু...





Comments

Popular posts from this blog

রিতা বসু

আমার জীবনের প্রথম এডভেঞ্চার : আজ সরস্বতীপূজো। আজকের দিনেই আমাদের সবারই বোধহয় হাতেখড়ি হয়। স্লেট পেনসিলে মাতৃভাষা লিখনের প্রথম শিক্ষা। তাই, সৌমিত্রর আবেদনে সাড়া দিয়ে আজকের দিনটিই বেছে নিলাম আমার জীবনের প্রথম এডভেঞ্চার-এর স্মৃতি রোমন্থনের জন্য।

অলক কুমার গাঙ্গুলী

খাজিয়ার থেকে মণিমহেশ : এক তারুণ্যভরা সৌন্দর্য্য। মাঝেমধ্যে আকস্মিকভাবে বিনা চেষ্টায় আমার সময়-পর্যটনের (time travel এর) সুযোগ ঘটে। যেসব মাধ্যম সময় যন্ত্রের (time machine-এর)কাজ করে সেগুলো বেশ মজার। হয়ত কোন জায়গার ছবি বা কুড়োন কোন পাথরখন্ড না হয় কোন লেখার পাতা। গত সপ্তাহের কথা বলি, কিছু দরকারী কাগজ খুঁজতে গিয়ে অন্য একটা বিচ্ছিন্ন পাতা নজরে এল। কাজের কিনা বুঝতে সবে দুলাইনে চোখ বুলিয়েছি অমনি দেখি আমি আর পড়ার ঘরে নেই; পৌঁছে গেছি ২৫বছর আগের দেখা হিমাচলের খাজিয়ারে। এরপর চোখের সামনে কত ছবি, কত সুখশ্মৃতির আনাগোনা। তারপর হঠাৎ কারো ডাকে বাস্তবে ফিরে আসা। সময় বিশেষে এরকমই সব ভ্রমণ হয় যাতে আমার ভূমিকা আছে, নিয়ন্ত্রণ নেই। এক পাতার ছোট্ট লেখা---খাজিয়ারের প্রাঙ্গণে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়েছিলাম, এটা সেই সময়ের কল্পনা। ঐ ভ্রমণের কিছু ছবি ছিল, লেখা কিছু ছিল না। এতদিন পরে এটা পাওয়ার পর ঐ যাত্রার মূল আকর্ষণ কেন্দ্রগুলো সম্বন্ধে কিছু লিখে রাখার ইচ্ছায় এই প্রয়াস। এখন তো বেড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে, আর লিখতেও আসুবিধা হয়--তাই ফোনের পাতায় লেখার চেষ্টা করে দেখছি, পারি কিনা। বাংলায় লেখার